অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের যুক্তরাজ্য সফর ঘিরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন চরম উত্তেজনা। ৪ দিনের এই সফরে একদিকে যেমন আন্তর্জাতিক কূটনীতির মঞ্চে বাংলাদেশ এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে যাচ্ছে, তেমনই অন্যদিকে তারেক-ইউনূস-এর সম্ভাব্য বৈঠক ঘিরে দেশের অভ্যন্তরেও একটি বড় ধরনের রাজনৈতিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। লন্ডন সফরের উদ্দেশ্য ও এর সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে Prime Beat Studio-এর এক্সক্লুসিভ প্রতিবেদন।
আন্তর্জাতিক কূটনীতি: রাজকীয় সম্মান ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক
সোমবার সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এমিরেটস এয়ার লাইন্সের একটি ফ্লাইটে লন্ডনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। তার এই সফরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো বাকিংহাম প্যালেসে ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে সাক্ষাৎ। এই সাক্ষাতেই তিনি রাজার হাত থেকে গ্রহণ করবেন সম্মানজনক ‘কিংস চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড’। এটি বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে।
এছাড়াও, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই বৈঠকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে যুক্তরাজ্যের সমর্থন, বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং অন্যান্য পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউস আয়োজিত একটি সংলাপেও তিনি অংশ নেবেন, যেখানে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক নানা বিষয়ে তার ভাবনা তুলে ধরবেন।
রাজনৈতিক জল্পনার কেন্দ্রে: তারেক ও ইউনূস, গোপন সূত্রের চাঞ্চল্যকর তথ্য!
তবে, এই সফরের সবচেয়ে বড় কৌতূহল এবং আলোচনার বিষয়বস্তু হলো বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সম্ভাব্য সাক্ষাৎ। সরকারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র Prime Beat Studio-কে জানিয়েছে, লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান এবং মুহাম্মদ ইউনূস-এর একটি বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি এই বৈঠক হয়, তবে তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করবে। এই দুই প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের এই ধরনের সম্ভাব্য সাক্ষাৎ দেশের রাজনীতিতে বড় আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অন্যদিকে, বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, গত সোমবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির সভায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ১৩ জুন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তারেক রহমানের একটি সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হবে। এই তথ্য রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে, যেখানে তারেক-ইউনূস বৈঠক নিয়ে নানা জল্পনা চলছে।
প্রেস সচিবের ইঙ্গিত: আশার আলো নাকি কৌশলী বার্তা?
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ বিষয়ে আজ একটি গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “তারেক রহমান বাংলাদেশের একটি বড় রাজনৈতিক দলের নেতা। তাঁর সঙ্গে লন্ডন সফরে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক হলে দেশের জন্য ইতিবাচক বার্তা যাবে। কিন্তু এই বৈঠক হবে কি না, তা এখনো ঠিক হয়নি। লন্ডনে গিয়েই বোঝা যাবে।” তার এই কৌশলী মন্তব্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। দুই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সম্ভাব্য এই বৈঠকের বিষয়ে সরকার অত্যন্ত সতর্ক।
পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার অঙ্গীকার: যুক্তরাজ্যের সমর্থন কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
এই সফরে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে যুক্তরাজ্যের সমর্থন বিশেষভাবে গুরুত্ব পাবে। দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করতে এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন আয়োজনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা অত্যন্ত জরুরি। পাশাপাশি, বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ ফেরত আনার বিষয়টি এই সফরের অন্যতম প্রধান এজেন্ডা। যুক্তরাজ্যসহ আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতা ছাড়া এই অর্থ ফেরত আনা কঠিন, এবং এই সফরে সেই বিষয়েই আলোচনা ও সহযোগিতা চাওয়া হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটিও তারেক রহমান ও প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বৈঠকের আলোচনার একটি সম্ভাব্য ক্ষেত্র হতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টা আগামী ১৪ জুন দেশে ফেরার কথা রয়েছে। তার এই সফর দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কী নতুন সমীকরণ তৈরি করে, এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের অবস্থান কতটা দৃঢ় হয়, তা দেখতে অপেক্ষা করবে গোটা জাতি।
ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন


