ধর্ষণ, এক অমোঘ অন্ধকার। সভ্যতার বুকে এক গভীর ক্ষত। গত ৫০ বছরে বাংলাদেশে এই ক্ষত আরও গভীর হয়েছে।
রাবেয়া, আশির দশকের এক সাধারণ মেয়ে। স্বপ্ন দেখত, পড়াশোনা করে বড় হবে। কিন্তু এক রাতে, তার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। গ্রামের প্রভাবশালী মাতব্বরদের লালসার শিকার হয় সে। লোকলজ্জার ভয়ে মুখ খুলতে পারেনি রাবেয়া। বিচার পায়নি।
নব্বইয়ের দশকে, শহরে পা রাখে মায়া। স্বপ্ন ছিল, নিজের পায়ে দাঁড়াবে। কিন্তু এক অন্ধকার গলিতে, তার স্বপ্নও হারিয়ে যায়। মায়া থানায় গিয়েছিল, কিন্তু পুলিশের উদাসীনতা আর সমাজের কটাক্ষে, সেও ফিরে আসে খালি হাতে।
২০০০-এর দশকে, ইন্টারনেটের যুগে, ধর্ষণের খবরগুলো দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে। তনু, সীমা, আফসানা… কত নাম, কত গল্প। কিন্তু বিচার? আজও অধরা।
২০২০-এর দশকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। “জাস্টিস ফর রাইসা”, “উই ওয়ান্ট জাস্টিস”… স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয় রাজপথ। কিন্তু তাতেও কি বদলায় কিছু?
এদিকে, পৃথিবীর অন্য প্রান্তে, স্পেনে “শুধু হ্যাঁ মানে হ্যাঁ” আইন পাশ হয়। সম্মতির গুরুত্বকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া হয়। ভারতে, নির্ভয়া কাণ্ডের পর আইন আরও কঠোর হয়। যুক্তরাষ্ট্রে, ধর্ষণের শাস্তি বিভিন্ন রাজ্যে ভিন্ন ভিন্ন, কোথাও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও দেওয়া হয়। সৌদি আরব আর চীনে, শরিয়া আইন অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে।
কিন্তু শুধু আইন কঠোর করলেই কি সমস্যার সমাধান হয়? রাবেয়া, মায়া, তনু, সীমা… এরা তো শুধু নাম নয়, এরা এক একটি জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। প্রতিবাদের ঝড় উঠলে, মোমবাতি হাতে রাস্তায় নামলে, মনে হয়, হয়তো এবার কিছু বদলাবে। কিন্তু পরক্ষণেই মনে হয়, এই অন্ধকার কি আদৌ ঘুচবে?
ধর্ষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে সম্মিলিতভাবে। প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা আর মানসিকতার পরিবর্তন। তবেই হয়তো রাবেয়া, মায়া, তনু, সীমার মতো আর কাউকে অন্ধকার গলিতে হারিয়ে যেতে হবে না।
লেখাঃ শওকত সমুদ্র