লোরেটো চার্চের সিঁড়ি… এমন একটি সিঁড়ি, যা রহস্যময়তার চাদরে মোড়ানো। কোনও হাতল নেই, কোনও দৃশ্যমান সহায়তা নেই—তবু এটি স্থাপত্যের এক বিস্ময়। আজ আমরা জানব সান্তা ফে, নিউ মেক্সিকোতে অবস্থিত এই সিঁড়ির গল্প, যা বহু বছর ধরে গবেষকদের এবং দর্শনার্থীদের কাছে রহস্য হিসেবে রয়ে গেছে।
১৮৭৩ সাল। সান্তা ফে শহরে ফরাসি নানদের দ্বারা নির্মিত হয় লোরেটো চার্চ। গথিক স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত এই চার্চটি আকর্ষণীয় তার উঁচু খিলান এবং নিখুঁত স্থাপত্যের জন্য। কিন্তু চার্চটির আসল রহস্য লুকিয়ে আছে এর অভ্যন্তরে—একটি সিঁড়ি, যা প্রকৃতির এবং প্রযুক্তির সব যুক্তিকে অস্বীকার করে।
চার্চটি নির্মাণের সময়, একটি বড় সমস্যার মুখোমুখি হন নির্মাতারা। উপরে যাওয়ার জন্য কোনও সিঁড়ি তৈরি করা হয়নি। এবং যেখানে সিঁড়ি নির্মাণ করা সম্ভব ছিল, সেখানে কোন সমাধান খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।”
নানরা তাদের সমস্যার সমাধান খুঁজতে প্রার্থনা শুরু করলেন। তারা সেন্ট জোসেফের কাছে সাহায্যের জন্য প্রার্থনা করলেন, যিনি কাঠমিস্ত্রিদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে পরিচিত। এবং প্রায় নয় দিন পর, একজন অজানা কাঠমিস্ত্রি হাজির হন।
এই সিঁড়ির সবচেয়ে বড় রহস্য হলো এর ভারসাম্য। বিজ্ঞান ও স্থাপত্য বিশেষজ্ঞরা বহু বছর ধরে এই সিঁড়ির গঠন নিয়ে গবেষণা করেছেন, কিন্তু কেউই নিশ্চিতভাবে বলতে পারেন না, কীভাবে এটি এত মজবুতভাবে দাঁড়িয়ে আছে।
অপরিচিত সেই ব্যক্তি বললেন, তিনি সিঁড়ি বানাতে পারবেন। কিন্তু তার একটি শর্ত ছিল—কাজ করার সময় কেউ তাকে বিরক্ত করতে পারবে না।
সেই কাঠমিস্ত্রি একা কাজ করতে লাগলেন। কোনও আধুনিক যন্ত্রপাতি বা পেরেকের ব্যবহার ছাড়াই তিনি কাঠের সাহায্যে সিঁড়ি তৈরি করতে শুরু করলেন। তার কাজ শেষ হতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগল। তারপর, হঠাৎ করেই সেই কাঠমিস্ত্রি অদৃশ্য হয়ে গেলেন। কোনও টাকা-পয়সার দাবি করেননি, এমনকি তার পরিচয়ও জানানো হয়নি।
এই সিঁড়ি অন্য যেকোনো সিঁড়ি থেকে আলাদা। এটি স্পাইরাল আকৃতির, দুইবার মোড় নেওয়া, এবং কোনও কেন্দ্রীয় সহায়ক খুঁটি বা হ্যান্ডরেল নেই। এই ধরনের সিঁড়ি তৈরি করা এক কথায় অসম্ভব মনে হয়, বিশেষত সেই সময়ের প্রযুক্তি দিয়ে।
এই সিঁড়ির সবচেয়ে বড় রহস্য হলো এর ভারসাম্য। বিজ্ঞান ও স্থাপত্য বিশেষজ্ঞরা বহু বছর ধরে এই সিঁড়ির গঠন নিয়ে গবেষণা করেছেন, কিন্তু কেউই নিশ্চিতভাবে বলতে পারেন না, কীভাবে এটি এত মজবুতভাবে দাঁড়িয়ে আছে।
আরেকটি রহস্য হল সিঁড়ির জন্য ব্যবহৃত কাঠ। গবেষকরা জানিয়েছেন, এই কাঠ এমন একটি প্রজাতির যা স্থানীয় এলাকায় পাওয়া যায় না। এর উৎস আজও অজানা।
অনেকে বিশ্বাস করেন, এই কাঠমিস্ত্রি সেন্ট জোসেফ ছিলেন, যিনি প্রার্থনার উত্তর দিতে এসেছিলেন। আবার কেউ কেউ বলেন, এটি ছিল কোনও দানশীল কাঠমিস্ত্রির কাজ। কিন্তু তার পরিচয় আজও রহস্যে ঢাকা।
অনেকেই মনে করেন, এই সিঁড়ির নির্মাণ প্রকৃতির আইনকে চ্যালেঞ্জ করে। তাই এটি অলৌকিক শক্তির ফল হতে পারে। চার্চটির নানরাও বিশ্বাস করেন, এটি সেন্ট জোসেফের আশীর্বাদ।
আজ লোরেটো চার্চে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আসেন, শুধুমাত্র এই সিঁড়ি দেখার জন্য। যদিও সময়ের সাথে সাথে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে, কিন্তু সিঁড়িটি আজও আগের মতোই মজবুত।
এই সিঁড়ি শুধুমাত্র স্থাপত্যের একটি নিদর্শন নয়, এটি একটি বিশ্বাস, প্রার্থনা, এবং অলৌকিকতার গল্প।
লোরেটো চার্চের এই সিঁড়ি কি সত্যিই কোনও অলৌকিক ঘটনার ফল? নাকি এটি একটি হারিয়ে যাওয়া শিল্পীর নিখুঁত সৃষ্টি? আমরা হয়তো কখনোই তা জানতে পারব না। কিন্তু যতদিন এই সিঁড়ি দাঁড়িয়ে আছে, ততদিন এটি আমাদের মুগ্ধ করে যাবে।
***********
আরো পড়তে ভিজিট করুন এখানে
ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন এখানে