হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির আল্লামা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, যিনি ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অঙ্গনে এক পরিচিত নাম, আজ আমাদের মধ্যে আর নেই।(ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইলাহি রাজিউন)।
তার জীবন ছিল ধর্মীয় জ্ঞান, সমাজসেবা এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের এক অনন্য সংমিশ্রণ।
আতাউল্লাহ হাফেজ্জীর জন্ম ১৯৪৮ সালের ১০ জানুয়ারি, লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর থানাধীন লুধুয়া গ্রামে। তার বাবার নাম মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী। যিনি ছিলেন একজন বিখ্যাত ইসলামী পণ্ডিত এবং রাজনীতিবিদ। আতাউল্লাহ হাফেজ্জী তার বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ধর্মীয় জ্ঞানার্জনে মনোনিবেশ করেন। তিনি কওমি মাদ্রাসা শিক্ষায় হাফেজ, কারী, দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) সম্পন্ন করেন। ছোটবেলা থেকেই তার মধ্যে ধর্মীয় জ্ঞানের প্রতি গভীর অনুরাগ ছিল। তার মেধা এবং অধ্যবসায় তাকে অল্প বয়সেই একজন বিশিষ্ট আলেম হিসেবে পরিচিত করে তোলে।
আতাউল্লাহ হাফেজ্জীর জীবনদর্শন ছিল ইসলাম ও সমাজের সেবায় নিবেদিত। তিনি বিশ্বাস করতেন, ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা সমাজে শান্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারে। তার এই বিশ্বাস তাকে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ করে। তিনি দরিদ্র ও অসহায় মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন এবং তাদের কল্যাণে বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে আতাউল্লাহ হাফেজ্জীর যাত্রা শুরু হয় তার বাবার প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মাধ্যমে। তিনি ইসলামী ঐক্যজোটের কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ফজলুল হক আমিনীর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির নেতা হিসেবেও তিনি দীর্ঘদিন সক্রিয় ছিলেন। তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশে ইসলামী মূল্যবোধের প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের অধিকার রক্ষা করা।
আতাউল্লাহ হাফেজ্জীর রাজনৈতিক জীবন ছিল নানা চড়াই-উতরাইয়ে পূর্ণ। তিনি বিভিন্ন সময়ে সরকারের নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন এবং জনগণের পক্ষে কথা বলেছেন। তার স্পষ্ট বক্তব্য এবং আপসহীন মনোভাব তাকে রাজনৈতিক অঙ্গনে এক বিশেষ স্থান এনে দেয়। তবে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে তাকে একাধিকবার কারাবরণ করতে হয়েছে। কিন্তু কোনো বাধাই তাকে তার আদর্শ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি।
২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের উত্থানের সময় আতাউল্লাহ হাফেজ্জী এই সংগঠনের নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং এই সংগঠনের মাধ্যমে ইসলামী মূল্যবোধের প্রচার ও প্রসারে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। তার নেতৃত্বে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশে ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
আতাউল্লাহ হাফেজ্জীর পারিবারিক জীবন ছিল অত্যন্ত সাধারণ। তিনি একজন ধার্মিক ও আদর্শবান মানুষ ছিলেন। তার স্ত্রী ও সন্তানরা তার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সমাজসেবায় নিজেদের নিয়োজিত করেন। তার পরিবার সবসময় তার পাশে থেকে তাকে সাহস জুগিয়েছে।
আতাউল্লাহ হাফেজ্জীর মৃত্যুতে বাংলাদেশের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অঙ্গনে এক অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তার জীবন ও কর্ম আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। তিনি তার আদর্শ ও কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবেন।
ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন এখানে
আরও খবর পড়তে ক্লিক করুন এখানে