ইউরোপীয় বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এয়ারবাস এবং ব্রিটিশ বিমান সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান মেনজিস এভিয়েশন বাংলাদেশে বিমান বিনিয়োগ-এর বিষয়ে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের বিমান চলাচল খাতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। গতকাল মঙ্গলবার লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তাদের হোটেলে অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে এ আগ্রহ প্রকাশ করা হয়।
এয়ারবাসের আগ্রহ: বাংলাদেশের অগ্রাধিকার ও লাভজনকতা
এয়ারবাসের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াউটার ভ্যান ওয়ার্শ এবং মেনজিস এভিয়েশনের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট চার্লস ওয়াইলি এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। ওয়াউটার ভ্যান প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, “আমরা বাংলাদেশকে আমাদের অগ্রাধিকার তালিকায় রেখেছি।” তিনি আরও বলেন, এয়ারবাস বাংলাদেশের জাতীয় বিমান সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে এবং সেটিকে লাভজনক করে তুলতে আগ্রহী। এয়ারবাস বছরে ৮০০টি বিমান সরবরাহ করতে সক্ষম এবং হেলিকপ্টার ও যুদ্ধবিমান তৈরিরও দক্ষতা রাখে বলে তিনি উল্লেখ করেন, যা বাংলাদেশে বিমান বিনিয়োগ-এর গুরুত্ব তুলে ধরে।
প্রধান উপদেষ্টার সতর্ক বার্তা: “তাড়াহুড়ো করে কোনো সিদ্ধান্ত নয়”
এ সময় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস অত্যন্ত সতর্ক অবস্থান ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “বিমান বহর আধুনিকায়নের জন্য বাংলাদেশ আপনাদের সব ধরনের প্রস্তাব শুনতে আগ্রহী, তবে তাড়াহুড়ো করে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হবে না।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমি জানতে আগ্রহী কী করা যায়, কী করা উচিত। আমরা আপনাদের কথা শুনবো। কিন্তু দ্রুত কোনো সিদ্ধান্ত আশা করবেন না। আমাদের সব কিছু নতুনভাবে পর্যালোচনা করতে হবে।” বাংলাদেশে বিমান বিনিয়োগ এর ক্ষেত্রে সরকার অত্যন্ত সতর্ক।
বিনিয়োগের মডেল ও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং-এ মেনজিসের প্রস্তাব
ওয়াউটার ভ্যান জানান, বাংলাদেশ যদি বিমানের বহরে এয়ারবাস যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে মোট অর্থায়নের ৮৫ শতাংশ এক্সপোর্ট ক্রেডিট এজেন্সি ফিনান্সিংয়ের মাধ্যমে ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এটি বাংলাদেশে বিমান বিনিয়োগ-এর জন্য একটি আকর্ষণীয় প্রস্তাব।
অন্যদিকে, লন্ডনভিত্তিক মেনজিস এভিয়েশন ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ও এয়ার কার্গো সেবা প্রদানে অন্যান্য প্রতিযোগীর সঙ্গে অংশ নিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে। তারা অন্তত ৬৫টি দেশে ৩০০টির বেশি বিমানবন্দরে এ ধরনের সেবা দিয়ে আসছে। মেনজিসের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াইলি বলেন, “আমরা বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলোকেও সহায়তা করতে চাই, আপনার জাতীয় বিমান সংস্থার পাশাপাশি।” তিনি আরও জানান, যদি মেনজিসকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং-এর দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাহলে তারা তাদের বিশ্বব্যাপী ৬৫ হাজার কর্মীর প্রশিক্ষণের জন্য ঢাকাকে একটি প্রশিক্ষণ হাব হিসেবে গড়ে তুলবে। ওয়াইলি জোর দিয়ে বলেন, “আমরা একটি প্রতিষ্ঠিত ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান এবং আমরা আমাদের সহায়তা প্রদান করতে চাই।”
ভবিষ্যৎ পথচলা
এয়ারবাস ও মেনজিস এভিয়েশনের এই আগ্রহ বাংলাদেশে বিমান বিনিয়োগ এবং গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবায় নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। তবে, প্রধান উপদেষ্টার সতর্ক বার্তা ইঙ্গিত দেয় যে, কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সরকার সকল দিক পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করবে। এই আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব বাংলাদেশের বিমান চলাচল খাতকে কতটা এগিয়ে নিয়ে যায়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
সূত্র: বাসস
ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন এখানে
আরও খবর পড়তে ক্লিক করুন এখানে