এইতো কিছুদিন আগেই তাঁর গ্রাফিতিতে কালি দিয়ে ভাষায় প্রকাশে অযোগ্য গালি লিখে এসেছিলো সুশীল বাঙালী। কেউ বা আবার তাঁর ছবিতে কালো দাগ কেটে রেখেছিলো রাগের বশে। বলছিলাম বেগম রোকেয়ার কথা। যার কারনেই আজ বাঙালি নারীরা পুরুষের কাঁধে কাধ মিলিয়ে চলেছে শিক্ষাক্ষেত্রে ও কর্মক্ষেত্রে। কে ছিলেন বেগম রোকেয়া? কি তাঁর পরিচয়?
বাঙালি নারী জাগরণের অগ্রদূত মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়া দিবস আজ। খ্যাতিমান বাঙালি সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক এবং নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যু দিন ৯ ডিসেম্বর। বিবিসি বাংলার জরিপে ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি’ তালিকায় অন্যতম বীরযোদ্ধা তিনি। মহীয়সী এ নারীর পুরো নাম বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। তিনি ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।রোকেয়ার জন্মের সময় মুসলিম সমাজে মেয়েদের লেখাপড়া শেখানোর কোনো চল ছিল না। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই পড়ার প্রতি বেশ আগ্রহ গড়ে ওঠে ছোট্ট রোকেয়ার। তাই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও পরিবারের সবার অগোচরে বেগম রোকেয়া তার বড় ভাইয়ের কাছে উর্দু, বাংলা, আরবি ও ফারসি পড়তে এবং লিখতে শেখেন।পড়ালেখার প্রতি প্রবল আগ্রহ থাকায় ভাইরাই বোন রোকেয়ার শিক্ষার দায়িত্ব নেন। তার জীবনে শিক্ষালাভ ও মূল্যবোধ গঠনে শুধু ভাই নয়, বড় বোনও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিলেন। তবে বিয়ের পর রোকেয়ার শিক্ষার হাল ধরেন তার স্বামী সাখাওয়াত।
১৮৯৮ সালে বিহারের ভাগলপুরে সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয় রোকেয়ার। স্বামী সাখাওয়াত ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। সমাজসচেতন, কুসংস্কারমুক্ত এবং প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন স্বামীর উৎসাহে ও নিজের আগ্রহে রোকেয়া উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ওঠেন।জীবনে শুধু নিজেই শিক্ষিত হতে চাননি রোকেয়া। চেয়েছিলেন শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে পুরো নারী সমাজকে। তিনি তার লেখা ‘সুলতানার স্বপ্ন’-র মাধ্যমে স্বাগত জানিয়েছেন বাংলার অবরোধবাসিনী নারীদের জেগে ওঠার।নারীদের জন্য নির্মিত রোকেয়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই বাংলার পিছিয়ে পড়া নারীদের কাছে পৌঁছে যায় মুক্তির পয়গাম। তার হাত ধরেই এ দেশের নারী সমাজ আজ যেমন দেশ পরিচালনার কাজে সফল তেমনি সফল অন্যান্য সেক্টরেও।কুসংস্কার আচ্ছন্ন নারী সমাজ রোকেয়ার হাত ধরেই আজ বিশ্বের বুকে পুরুষের সঙ্গে সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছেন, রাখছেন সফলতার চিহ্ন।