আরো একবার জয়ের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে এলো বাংলাদেশ। ৪ মার্চ সিলেট স্টেডিয়ামে ২০৭ রানের বিশাল টার্গেটে খেলতে নেমে ২০৩ রানে থামে বাংলাদেশের রানের চাকা, শ্রীলংকা ৩ রানে ম্যাচ জিতে নেয়।
সিলেট স্টেডিয়ামে টসে জিতে বোলিং এর সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল শান্ত। তার সিদ্ধান্তকে সঠিক প্রমাণ করে প্রথম ওভারেই নিজের প্রথম শিকার তুলে নেন শরিফুল। ইনিংসের প্রথম বলে চার দিয়ে শুরু করা অভিশকা ফার্নান্দো, দ্বিতীয় বলেই উইকেটের পিছনে লিটন দাসের গ্লাভসবন্দী হন। অপরপ্রান্তে থাকা কুশাল মেন্ডিস রানের চাকা থামতে দেননি। ২য় উইকেট জুটিতে কামিন্ডু মেন্ডিসের সাথে ২৫ বলে ৩৭ রানের জুটি গড়েন তিনি।
ইনিংসের ৫ম ওভারে তাসকিনের বলে সৌম্য সরকারের তালুবন্দী হন কামিন্ডু মেন্দিস। তবে এর আগেই ২ ছয় ও ১ চারে ১৪ বলে ১৯ করেন তিনি।
বাংলাদেশি বোলারদের দুঃস্বপ্নের শুরু এরপর থেকেই। টু ডাউনে নামা সামিরা সামারাউইকরামারা এবং কুশাল মেন্ডিস মিলে চার ছয়ের বন্যায় ভাসাতে থাকেন প্রতিটি বোলারকে। মাত্র ২৮ বলে নিজের অর্ধশতক তুলে নেন কুশাল। সামিরা অন্যপাশ ধরে খেললেও, তিনিও ছিলেন সপ্রতিভ। অবশেষে ১৫তম ওভারে লেগস্পিনার রিশাদের বলে লং অনে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের তালুবন্দী হন কুশাল। আউট হওয়ার আগে মাত্র ৩৬ বলে ৫৯ রান করে বাংলাদেশের শিবিরে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে গেছেন তিনি। অবশ্য, ৫৬ রানের মাথায় সৌম্য সরকারের বলে লিটন দাস কুশালের একটি ক্যাচ ফেলে দিয়েছিলেন। তবে তার মাশুল খুব বেশি দিতে হয় নি।
এরপর ক্রিজে আসেন, ক্যাপ্টেন চারিথ আসালাঙ্কা। এসেই চড়াও হন, বাংলাদেশি বোলারদের উপর। সামিরা এবং আসালাঙ্কা জুটি ২০ ওভার পর্যন্ত ব্যটিং করেন। এই জুটিতে ওভারপ্রতি গড়ে প্রায় ১৪ রান করে, ৩২ বলে আসে ৭৩ রান। বাংলাদেশের টার্গেট দাঁড়ায় ২০৭ রান। সামিরা ৪৮ বলে ৬১ এবং আসালাঙ্কা ২১ বলে ৪৪ করে অপরাজিত ছিলেন। বাংলাদেশের পক্ষে তুলনামূলক সফল বোলার রিশাদ, ৪ ওভারে ৩২ রান দিয়ে তিনি নিয়েছেন ১ উইকেট। এছাড়া তাসকিন এবং শরিফুল ও ১ টি করে উইকেট নিয়েছেন।
২০৭ রানের বিশাল টার্গেটে খেলতে নেমে ইনিংসের ১ম ওভারে অভিজ্ঞ ম্যাথিউস এর ৩য় বলেই লিটন দাস ০ রানে সাজঘরে ফেরেন। ২য় উইকেট জুটিতে শান্ত এবং সৌম্য ১৬ বলে ২১ রান তোলেন। ইনিংসের ৪র্থ ওভারে সৌম্য ১১ বলে ১২ রান করে বিনুরা ফার্নান্ডোর বলে আউট হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন। ৯ ওভারের মধ্যে একে একে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন তৌহিদ হৃদয় এবং ক্যাপ্টেন শান্ত। ৪ নম্বর পজিশনে এখনো নিজেকে থিতু করতে পারেননি হৃদয়, তা বোঝাই যাচ্ছে। ম্যাথিউসের ২য় শিকার হয়ে ফেরার আগে ৫ বলে ৮ রান করেন তিনি। শান্ত আর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বড় জুটির ইঙ্গিত দিলেও নবম ওভারে পাথিরানার বলে ম্যাথুসের হাতে ধরা পড়েন শান্ত। ২২ বলে ২০ রান করে আউট হন তিনি। দলের স্কোর তখন ৮.৫ ওবারে ৬৮ রান।
এসময় ক্রিজে আসেন জাকির আলী। শুরু হয় মাহমুদুল্লাহ এবং জাকির আলীর জুটি। মাহমুদুক্কাহ রিয়াদ আরেকবার প্রমাণ করলেন, তারুণ্য এবং অভিজ্ঞতা, দুটোই ক্রিকেটের জন্য জরুরি। মাঠের আরদিকে চার ছয়ের ফুলঝুড়ি ছুটিয়ে ২৭ বলে নিজের অর্ধশতক তুলে নেন রিয়াদ। ৩১ বলে ৫৪ রান করে থিকসানার বলে ফার্নান্দোর তালুবন্দী হয়ে বাংলাদেশি দর্শকদের একরাশ হতাশা দিয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। দলের স্কোর তখন ১৩.২ ওভারে ১১৫। জয়ের জন্য প্রয়োজন, ৩৮ বলে ৯২ রান।
এরপরই শুরু জাকের আলী শো। মেহেদীর সাথে গড়েন, ২৭ বলে ৬৫ রানের জুটি। ১৮০ রানের মাথায় ১১ বলে ১৬ রান করে বিদায় নেন মেহেদী। ১৩ বলে প্রয়োজন ২৭ রান। জাকের আলী তখন অর্ধশতক পেরিয়েছেন। অপরপ্রান্ত থেকে রিশাদ হাসানও তাকে সঙ্গ দিতে ব্যর্থ হন। অবশেষে জাকের আলী যখন ১৯.৩ বলের সময় ৩৪ বলে ৬৮ করে লং অফে ধরা পড়েন, তখনই বাংলাদেশের আশা শেষ। শেষে শরীফুলের ৪ শুধু ব্যবধান কমিয়েছে। শেষ বলে ৫ রান দরকার থাকলেও, তাসকিন একটি সিঙ্গেল বের করতে পেরেছেন শুধু। দল হারে ৩ রানে।
৩ ওভারে ১৭ রানে ২ উইকেট নিয়ে সবচেয়ে সফল বোলার এঞ্জেলো ম্যাথিউস। এছাড়া ফার্নান্ডো এবং শানাকা ২ টি এবং থিকসানা ও পাথিরানা একটি করে উইকেট লাভ করেন। শ্রীলংকান ক্যাপ্টেন চারিথ আসালাঙ্কা ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ নির্বাচিত হন।
পুরো ম্যাচে বাংলাদেশের প্রাপ্তি জাকের আলী। প্রতিপক্ষ যেই হোক না কেনো, এত বড় রান তাড়া করতে যে কোন দলের জন্যই চ্যালেঞ্জ। তবে পরের ম্যাচে টাইগাররা জিতেই মাঠ ছাড়বে, এমন প্রত্যাশা দর্শকদের।
ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন এখানে
আরও খবর পড়তে ক্লিক করুন এখানে